খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে ১০ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সোমবার জানিয়েছেন কুয়েট ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যসচিব ও পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) অধ্যাপক মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ। সভায় ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির ১১ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, আজীবন বহিষ্কৃতদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ।
আজীবন বহিষ্কৃত ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রায়হান আহমেদ (শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-১৮), সাদ আহমেদ (শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-১৮), আদমান রাফি (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯) এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাজেদুল কবির (শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-১৭)।
আজীবন বহিষ্কৃত ও ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান (শিক্ষাবর্ষ ২০১৩-১৪), ফুয়াদুজ্জামান ফাহিম (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯), মো. মেহেদী হাসান (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯), মো. সাফাত মোর্শেদ (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯), বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফখরুল ইসলাম (শিক্ষাবর্ষ ২০১৭-১৮) এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিজুয়ান ইসলাম (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯)।
এ ছাড়া লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোস্তাক আহমেদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শুভেন্দু দাস ও ফারিয়ার জামিলকে চিরতরে প্রংশসাপত্র না দেওয়া এবং বিভিন্ন মেয়াদের জন্য সনদ প্রদান না করার শাস্তি দেওয়া হয়।
ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কুয়েটের এস এ রশীদ হলে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমানকে শারীরিক ও মানসিকভাকে নির্যাতন করেন কিছু শিক্ষার্থী।
২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ২৭ জানুয়ারির ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালেচনা শেষে ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত ১৩ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান দাবি করেন, তারা কেউই জাহিদুরকে মারধর করেননি। জাহিদুর হিজবুত তাহরিরের সদস্য, এ অভিযোগে কুয়েট কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”