শবে বরাত যা বা লাইলাতুল বরাত নামেও পরিচিত, এই রাত হিজরী শা’বান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলিমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। শবে বরাতের ফজিলত নিয়ে এই পোস্টে আমি আলোচনা করেছি, শবে বরাতের তাৎপর্য, শবে বরাতের পালনের রীতিনীতি, শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস, শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী, সহ শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে হবে ইত্যাদি।
শবে বরাতের তাৎপর্য
- আল্লাহর ক্ষমা: এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন।
- ভাগ্য নির্ধারণ: ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করা হয় যে এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
- ইবাদতের রাত: অনেক মুসলিম এই রাতটিকে নফল ইবাদতের মাধ্যমে কাটান।
- পূর্বপুরুষদের জন্য প্রার্থনা: অনেকে এই রাতে তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
শবে বরাতের পালনের রীতিনীতি
- রাত জেগে ইবাদত: অনেকে রাত জেগে নামাজ, তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির করেন।
- খয়রাত: অনেকে এই রাতে গরিবদের খাবার ও অর্থ দান করেন।
- মসজিদে সমাবেশ: অনেকে মসজিদে সমাবেশ করে ইবাদত করেন।
- বিশেষ খাবার: অনেক বাড়িতে এই রাতে বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়।
শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতের ১০ টি ফজিলত:
১. আল্লাহ্ তায়ালা বান্দাদের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন: এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য মানুষের রিজিক, জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখ সবকিছু লিপিবদ্ধ করা হয়।
২. ক্ষমা ও রহমতের রাত: এই রাতে আল্লাহ্ তায়ালা অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদের প্রতি অশেষ রহমত বর্ষান।
৩. দোয়া কবুলের রাত: এই রাতে আল্লাহ্ তায়ালা বান্দাদের দোয়া কবুল করেন।
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত: এই রাতে আল্লাহ্ তায়ালা জাহান্নাম থেকে অগণিত বান্দাকে মুক্তি দান করেন।
৫. ফেরেশতাদের সমাগম: এই রাতে পৃথিবীতে অগণিত ফেরেশতা নেমে আসেন এবং বান্দাদের জন্য দোয়া করেন।
৬. পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহের ক্ষমা: এই রাতে আল্লাহ্ তায়ালা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।
৭. লাইলাতুল বারাআত নামকরণ: এই রাতকে “লাইলাতুল বারাআত” (মুক্তির রাত) বলা হয়।
৮. শবে বরাতে রোজা রাখার ফজিলত: এই রাতে রোজা রাখার ফজিলত অপরিসীম।
৯. কবর জিয়ারতের ফজিলত: এই রাতে কবর জিয়ারত করার ফজিলত অনেক।
১০. হালুয়া-রুটি বানানোর প্রচলন: এই রাতে হালুয়া-রুটি বানানো বাংলাদেশের একটি প্রচলিত রীতিনীতি।
শব-ই-বরাত কত তারিখ
পবিত্র শবে বরাত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের বাংলা তারিখ ১২ ফাল্গুন ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দ (রবিবার) তারিখে পালিত হবে। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে ২৫শ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ সরকারি ছুটি ঘোশনা করা হয়েছে।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস
মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহর রহমত:
হজরত আবু মুসা আল-আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মধ্য শা’বানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেন ও মুশরিক (আল্লাহর সাথে শিরককারী) এবং মুশাহিন (হিংসুক) ব্যতীতসকলকে ক্ষমা করে দেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৩৯০)
দোয়া কবুলের রাত:
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “মধ্য শাবানের রাত যখন আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে রোজা রাখ। কারণ এই রাতে আল্লাহ তায়ালা ‘আরশ’ এর উপরে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে যে আমার কাছে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছে যে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দেবো? কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো?'” (সুনানে আন-নাসাঈ, হাদিস নং: ৩৯০৪)
রাতের শেষভাগে ক্ষমা লাভ:
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে এত বেশি লোককে মুক্ত করেন যত সংখ্যক লোক বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।” (তিরমিযী, হাদিস নং: ৩৫৭৬)
রোজা রাখার ফজিলত:
হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৩৮৯)
শবে বরাতের রাত জেগে ইবাদত:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহর ইবাদতে রাত জাগবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে।” (মুসলিম, হাদিস নং: ৭৫৯)
শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী
- হাদিসে “ভাগ্য রজনী” শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি।
- কিছু হাদিসে বলা হয়েছে এ রাতে আল্লাহ্ তায়ালা বান্দাদের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন।
- অন্য হাদিসে বলা হয়েছে এ রাতে আল্লাহ্ তা’য়ালা বান্দাদের দোয়া কবুল করেন এবং ক্ষমা করেন।
বরাত অর্থ কি
বরাত শব্দের অর্থ নির্ভর করে আপনি কোন ভাষা থেকে এটি ব্যবহার করছেন তার উপর।
- ফার্সি ভাষায়: বরাত শব্দের অর্থ “মুক্তি”, “ভাগ্য”, “বণ্টন”, “নির্ধারিত”।
- বাংলা ভাষায়: বরাত শব্দের অর্থ “কবুল করা”, “স্বীকার করা”, “গ্রহণ করা”।
ইসলামী প্রেক্ষাপটে:
- শবে বরাত হলো মধ্য শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত।
- শবে বরাত কে “ভাগ্য রজনী” বলা হয় কারণ কিছু হাদিসে বলা হয়েছে যে এই রাতে আল্লাহ্ তায়ালা বান্দাদের পরবর্তী এক বছরের জন্য কিছু বিষয় নির্ধারণ করেন।
- শবে বরাত কে “মুক্তির রাত” বলা হয় কারণ কিছু হাদিসে বলা হয়েছে যে এই রাতে আল্লাহ্ তায়ালা তার বান্দাদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন।
শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে হবে
২০২৪ সালের শবে বরাত ২৫ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) তারিখে পালিত হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি শাবান মাসের চাঁদ দেখার জন্য সভা করবে। যদি চাঁদ দেখা যায়, তাহলে ১২ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) থেকে শাবান মাস শুরু হবে। সেই হিসেবে, ২৫ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) দিবাগত রাতে (শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) শবে বরাত পালিত হবে।
উল্লেখ্য:
- চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
- বাংলাদেশ সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারি শবে বরাতের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে।
শবে বরাত মুসলিমদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। যদিও এর তাৎপর্য ও রীতিনীতি সম্পর্কে কিছু বিতর্ক আছে, তবুও অনেক মুসলিম এই রাত নফল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে কাটান।